রাজধানীর দুটি নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে তৈরি হয়েছে ভয়ংকর মাদক এলএসডির বাজার। উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরাই এর প্রধান ক্রেতা। তবে ঢাকায় এলএসডির বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া সাবেক শিক্ষার্থীদের একটা অংশ বিদেশ থেকে এলএসডির চালান আনছে দেশে। মঙ্গলবার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য মেলে।
রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (নারকোটিক্স)। এ সময় তার কাছ থেকে ১৩৮ পিস এলএসডি স্ট্রিপ বা ব্লক উদ্ধার করা হয়।
ইন্টারনেটের তথ্যভান্ডারে এলএসডির পুরো নাম বেশ লম্বা। ইংরেজি নাম লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইজড। তবে এটি অনেকের কাছে হেলুসিনেশন বা বিশেষ ঘোর লাগা নেশা হিসাবে পরিচিত।
উচ্চশিক্ষা : মধ্যরাতে গ্রেফতারের পর নাজমুল ইসলাম বিশ্বাসকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার ব্যক্তিগত জীবন এবং মাদক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। মা কাজী নাছিমা খানম পর্যটন করপোরেশনের উচ্চপদে চাকরি শেষে এখন অবসরে। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই কানাডা প্রবাসী। গ্রামের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার নগরবাড়ী।
অতিসহজে আসছে চালান : নাজমুলের মোবাইল ফোন ঘেঁটে এলএসডির চালান আনা এবং মূল্য পরিশোধ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। বিটকয়েনে লেনদেনের প্রমাণ মেলে। এছাড়া গোপন অ্যাপ এবং ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমেও এলএসডি কেনাবেচা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিকাশ, রকেট এবং নগদের মাধ্যমে টাকাকে বিটকয়েনে রূপান্তর করা হচ্ছে। এরপর বিটকয়েন ওয়ালেট (অ্যাকাউন্ট) ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনা হয় এলএসডির স্ট্রিপ। পার্সেল আকারে আন্তর্জাতিক কুরিয়ারে চালান বুকিং দেওয়া হয়। কোনো ধরনের তল্লাশি বা যাচাই ছাড়াই এলএসডিভর্তি পার্সেল ডেলিভারি হয় দেশে।
সংশ্লিষ্ট নারকোটিক্স কর্মকর্তারা বলছেন, বহন এবং আকৃতিগত কারণে সুনির্দিস্ট তথ্য ছাড়া এলএসডির চালান আটক করা প্রায় অসম্ভব। কয়েক বছর আগে ভারতে এলএসডির একটি চালান আটকের পর হইচই পড়ে যায়। একটি সাধারণ বইয়ের আকারে বিশাল চালান আনা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বই আটকের পর পরীক্ষা করে দেখা যায়, বইয়ের অসংখ্য পাতা মূলত রূপান্তরিত এলএসডি স্ট্রিপ।
এর মধ্যে নিসা নামের এক শিক্ষার্থীর বাসা নতুনবাজার এলাকায়। তার কাছে এলএসডির কয়েকটি স্ট্রিপ ডেলিভারি দিতে গেলে নাজমুলকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। নিসাকে গ্রেফতার করা গেলে এলএসডি নেটওয়ার্কে জড়িত অনেকের নাম জানা সম্ভব হবে।
তারা জীবনে একটু প্রশান্তি পেতে চান। তাদের অনেকেই মনে করেন, এলএসডি সেবনে তারা হতাশা থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজে পাবেন। কিন্তু বাস্তবে তারা নিজের অজান্তেই মাদকের অন্ধকার গভীরে দিনদিন ডুবে যাচ্ছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।